ভাষার জন্য ভাসা ভাসা ভালোবাসা কেন?
এইচ আর রাসেল : একুশ এলেই আমরা বড় আবেগী হয়ে উঠি। সারাবছর অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা শহিদ মিনারগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করি। খবরের কাগজ গুলোতে শুরু হয়ে যায় কলাম লেখার ধুম। গল্প,কবিতা আরও কত কী! সভা সেমিনারে বক্তৃতা বিবৃতিতে ব্যাস্ত থাকে সুশীল সমাজ। তারপর একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারের মেঝেতে এক বোঝা ফুল ছিটিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বাড়ি ফিরে আসি। ব্যাস আগামী এক বছরের জন্য সে পর্যন্তই শেষ।
এসব আনুষ্ঠানিকতার সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বৈকি। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে এইটুকু সম্মান পাওয়া এটা তাদের অধিকার। কিন্তু যার জন্য তাদের এই জীবন দেওয়া সেই ভাষার মান কি আমরা রক্ষা করতে পারছি? সেই ভাষাটা কি তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলতে পারছে? না পারছে না। আমরা আমাদের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া ভাষার মান রক্ষা করতে পারছি না। আমরা পদে পদে নিজ ভাষার প্রতি অবিচার করে যাচ্ছি, অসম্মান করে যাচ্ছি। মাতৃভাষার চরম অবমাননার উৎসবে যেন মেতে উঠেছি আমরা। এমনকি মাতৃভাষার প্রতি আমরা অন্যায় করছি, অবিচার করছি এ বিষয়টাও আমরা বুঝতে পারছি না কিংবা বুঝতে চাইছি না। ফলে প্রাণপ্রিয় ভাষার প্রতি অবহেলা,অনাদর আর অযতেœর বিষয়টি করে যাচ্ছি অবলীলায়। দেখুন যদি আপনাকেই প্রশ্ন করা হয় আপনার অফিসে আপনি কোন ভাষায় দাপ্তরিক কাজকর্ম কিংবা ফাইলপত্র সম্পন্ন করেন, কোন ভাষায় আবেদন লিখেন, কোন ভাষায় আপনি দস্তখত করেন। তাহলে আপনিসহ ৯৫ ভাগ মানুষের কাছ থেকেই নিশ্চিত উত্তর আসবে ইংরেজি ভাষায়। যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার ভিজিটিং কার্ডটি কোন ভাষায় ছাপানো। ৯৮ ভাগ লোকের কাছ থেকেই নিশ্চিত উত্তর আসবে ইংরেজি। শহরের অলিগলিতে ছোট বড় সাইনবোর্ড, রাস্তায় সেট করা বড় বড় বিলবোর্ড, মার্কেট কিংবা দোকানের সাইনবোর্ড, বাসা-বাড়ির নামফলকসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুনগুলো কোন ভাষায় লেখা। উত্তর আসবে বেশিরভাগই ইংরেজি ভাষায় লেখা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনগুলোর ৯৫ ভাগও সেই ইংরেজিতেই লেখা। তাও আবার এমন ইংরেজি যা অন্য কোনো ডাক্তার ছাড়া বোঝার সাধ্য কারো নেই। দোকানের ক্যাশম্যামো, ভাউচার ইত্যাদি বিষয়গুলোর বেশিরভাগই ইংরেজিতে ছাপা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় এখনো ইংরেজিতেই ছাপা হয়! অনেকের মোবাইলের রিংটোনটাও বিদেশি কোনো মিওজিকের অংশবিশেষ। আমরা কথা বলতে গিয়ে বা বিভিন্ন আলাপচারিতায় অকারণেই ঢুকিয়ে দিচ্ছি ইংরেজি শব্দ। আর নিজেকে বাহবা দিচ্ছি, প্রগতিশীল আর স্মার্ট ভেবে। কিন্তু কেন এসব করছি আমরা? বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন দেখুনতো আমার রক্ত দিয়ে অর্জিত মায়ের ভাষা দিয়ে কি এই কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব । প্রয়োজন শুধু ইতিবাচক মানসিকতার। প্রয়োজন নিজের ভাষার প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার। আর এসবের অভাবেই আজ আমরা বাংলার সাথে অদ্ভুত ইংরেজি মিশিয়ে জগাখিচুরির বাংলিশ ভাষা আবিষ্কার করেছি। শুধু ভালোবাসার অভাবেই আজ অনেক বিদেশি শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় স্থায়ী জায়গা নিয়ে নিয়েছে। তাই আজ আমরা বাংলায় ‘বাহ’! কিংবা ‘চমৎকার’ না বলে বলি ‘ওয়াও’। গর্ভধারিনী মাকে ‘মা’ না বলে বলি ‘মম’। জন্মদাতা বাবাকে ‘বাবা’ না বলে বলছি ‘ড্যাড’। এখনতো বোন কিংবা আপুকে বলা হচ্ছে ‘সিস’ আবার ভাইকে বলা হচ্ছে ‘ব্রো’। আপন সন্তানকে আমার সন্তান না বলে বলা হচ্ছে আমার ‘বেবি’। আমি জানি না মা-এর মমত্ববোধ আর ভালোবাসার যে পরশ এই ‘মা’ ডাকে পাওয়া যায় তা ‘মম’ শব্দের মধ্যে আছে কি না। আমি জানিনা আমার সন্তান বলতেই বুকের মধ্যে যে গর্বের ঢেউ খেলে যায় সেই অনুভূতি ‘বেবি’ শব্দের মধ্যে আছে কি না। আজকাল এফএম রেডিওগুলোতে বাংলা ভাষার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হচেছ। এসব যেন দেখার কেউ নেই। যেভাবে আমাদের তরুণ সমাজ বাংলা ইংরেজির মিশেলে নতুন ভাষার সৃষ্টি করছে তা প্রকৃতই হতাশার এবং আতংকের । আমাদের সমস্যাটা হচেছ আমরা অন্যের সংস্কৃতি, অন্যের কৃষ্টি কালচারকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। আমরা মনে করছি বিদেশী সংস্কৃতির চর্চা করলে, বিদেশি ভাষার ব্যবহার করলে সমাজে আমার অবস্থান উঁচু হয়, নিজেদের প্রগতিশীল ভাবা যায়, নিজেকে অন্যের থেকে আলাদা ভাবা যায়। কিন্তু আসলে কি তা হয়? বরং নিজের মাকে তথা মায়ের ভাষাকে অবজ্ঞা করে অন্যকে বেশি ও অহেতুক গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের দৈন্যতা প্রকাশ করছি আর নিজেদের ছোট মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি । অথচ আমার আপনার মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভূষিত। যেখানে বিশে^র কমবেশি ১৯০টি দেশ আমার মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করে। যেখানে আমার বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে সেখানে আমরা অসম্মান করে চলেছি নিজ মাতৃভাষাকে। আমি বিদেশি ভাষা শেখার বিরোধী নই, নিতান্ত প্রয়োজনে ব্যবহারেও আপত্তি করছি না। শুধু মাসীকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজের মাকে অবহেলা না করার উপর জোর দিচ্ছি। কারণ মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ হতে পারে না। তাই আসুন ভাসা ভাসা নয় মন থেকেই ভালোবাসি মাতৃভাষাকে নিজ ভাষাতেই মাকে মা বলে ডাকি, নিজ ভাষাতেই হাসি কাঁদি। আর তাতেই হবে শহিদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন।
এসব আনুষ্ঠানিকতার সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বৈকি। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে এইটুকু সম্মান পাওয়া এটা তাদের অধিকার। কিন্তু যার জন্য তাদের এই জীবন দেওয়া সেই ভাষার মান কি আমরা রক্ষা করতে পারছি? সেই ভাষাটা কি তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলতে পারছে? না পারছে না। আমরা আমাদের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া ভাষার মান রক্ষা করতে পারছি না। আমরা পদে পদে নিজ ভাষার প্রতি অবিচার করে যাচ্ছি, অসম্মান করে যাচ্ছি। মাতৃভাষার চরম অবমাননার উৎসবে যেন মেতে উঠেছি আমরা। এমনকি মাতৃভাষার প্রতি আমরা অন্যায় করছি, অবিচার করছি এ বিষয়টাও আমরা বুঝতে পারছি না কিংবা বুঝতে চাইছি না। ফলে প্রাণপ্রিয় ভাষার প্রতি অবহেলা,অনাদর আর অযতেœর বিষয়টি করে যাচ্ছি অবলীলায়। দেখুন যদি আপনাকেই প্রশ্ন করা হয় আপনার অফিসে আপনি কোন ভাষায় দাপ্তরিক কাজকর্ম কিংবা ফাইলপত্র সম্পন্ন করেন, কোন ভাষায় আবেদন লিখেন, কোন ভাষায় আপনি দস্তখত করেন। তাহলে আপনিসহ ৯৫ ভাগ মানুষের কাছ থেকেই নিশ্চিত উত্তর আসবে ইংরেজি ভাষায়। যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার ভিজিটিং কার্ডটি কোন ভাষায় ছাপানো। ৯৮ ভাগ লোকের কাছ থেকেই নিশ্চিত উত্তর আসবে ইংরেজি। শহরের অলিগলিতে ছোট বড় সাইনবোর্ড, রাস্তায় সেট করা বড় বড় বিলবোর্ড, মার্কেট কিংবা দোকানের সাইনবোর্ড, বাসা-বাড়ির নামফলকসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুনগুলো কোন ভাষায় লেখা। উত্তর আসবে বেশিরভাগই ইংরেজি ভাষায় লেখা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনগুলোর ৯৫ ভাগও সেই ইংরেজিতেই লেখা। তাও আবার এমন ইংরেজি যা অন্য কোনো ডাক্তার ছাড়া বোঝার সাধ্য কারো নেই। দোকানের ক্যাশম্যামো, ভাউচার ইত্যাদি বিষয়গুলোর বেশিরভাগই ইংরেজিতে ছাপা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় এখনো ইংরেজিতেই ছাপা হয়! অনেকের মোবাইলের রিংটোনটাও বিদেশি কোনো মিওজিকের অংশবিশেষ। আমরা কথা বলতে গিয়ে বা বিভিন্ন আলাপচারিতায় অকারণেই ঢুকিয়ে দিচ্ছি ইংরেজি শব্দ। আর নিজেকে বাহবা দিচ্ছি, প্রগতিশীল আর স্মার্ট ভেবে। কিন্তু কেন এসব করছি আমরা? বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন দেখুনতো আমার রক্ত দিয়ে অর্জিত মায়ের ভাষা দিয়ে কি এই কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব । প্রয়োজন শুধু ইতিবাচক মানসিকতার। প্রয়োজন নিজের ভাষার প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার। আর এসবের অভাবেই আজ আমরা বাংলার সাথে অদ্ভুত ইংরেজি মিশিয়ে জগাখিচুরির বাংলিশ ভাষা আবিষ্কার করেছি। শুধু ভালোবাসার অভাবেই আজ অনেক বিদেশি শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় স্থায়ী জায়গা নিয়ে নিয়েছে। তাই আজ আমরা বাংলায় ‘বাহ’! কিংবা ‘চমৎকার’ না বলে বলি ‘ওয়াও’। গর্ভধারিনী মাকে ‘মা’ না বলে বলি ‘মম’। জন্মদাতা বাবাকে ‘বাবা’ না বলে বলছি ‘ড্যাড’। এখনতো বোন কিংবা আপুকে বলা হচ্ছে ‘সিস’ আবার ভাইকে বলা হচ্ছে ‘ব্রো’। আপন সন্তানকে আমার সন্তান না বলে বলা হচ্ছে আমার ‘বেবি’। আমি জানি না মা-এর মমত্ববোধ আর ভালোবাসার যে পরশ এই ‘মা’ ডাকে পাওয়া যায় তা ‘মম’ শব্দের মধ্যে আছে কি না। আমি জানিনা আমার সন্তান বলতেই বুকের মধ্যে যে গর্বের ঢেউ খেলে যায় সেই অনুভূতি ‘বেবি’ শব্দের মধ্যে আছে কি না। আজকাল এফএম রেডিওগুলোতে বাংলা ভাষার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হচেছ। এসব যেন দেখার কেউ নেই। যেভাবে আমাদের তরুণ সমাজ বাংলা ইংরেজির মিশেলে নতুন ভাষার সৃষ্টি করছে তা প্রকৃতই হতাশার এবং আতংকের । আমাদের সমস্যাটা হচেছ আমরা অন্যের সংস্কৃতি, অন্যের কৃষ্টি কালচারকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। আমরা মনে করছি বিদেশী সংস্কৃতির চর্চা করলে, বিদেশি ভাষার ব্যবহার করলে সমাজে আমার অবস্থান উঁচু হয়, নিজেদের প্রগতিশীল ভাবা যায়, নিজেকে অন্যের থেকে আলাদা ভাবা যায়। কিন্তু আসলে কি তা হয়? বরং নিজের মাকে তথা মায়ের ভাষাকে অবজ্ঞা করে অন্যকে বেশি ও অহেতুক গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের দৈন্যতা প্রকাশ করছি আর নিজেদের ছোট মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি । অথচ আমার আপনার মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভূষিত। যেখানে বিশে^র কমবেশি ১৯০টি দেশ আমার মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করে। যেখানে আমার বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে সেখানে আমরা অসম্মান করে চলেছি নিজ মাতৃভাষাকে। আমি বিদেশি ভাষা শেখার বিরোধী নই, নিতান্ত প্রয়োজনে ব্যবহারেও আপত্তি করছি না। শুধু মাসীকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজের মাকে অবহেলা না করার উপর জোর দিচ্ছি। কারণ মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ হতে পারে না। তাই আসুন ভাসা ভাসা নয় মন থেকেই ভালোবাসি মাতৃভাষাকে নিজ ভাষাতেই মাকে মা বলে ডাকি, নিজ ভাষাতেই হাসি কাঁদি। আর তাতেই হবে শহিদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন