বাসে এ আচরণগুলো আপনিও করেন কি?
এইচ আর রাসেল : আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাপনে একটা অপরিহার্য প্রয়োজন হচ্ছে পরিবহন। জীবন জিবিকার তাগিদে আমাদের প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। সেই কর্মক্ষেত্রটা হতে পারে কারও অফিস, কারও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। বাসার কাছের স্কুল ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পরিবহন ব্যবহার করেন। তাছাড়া আত্মাীয় স্বজনের বাসায় , হসপিটাল কিংবা বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করতে আমরা পরিবহনের দ্বারস্থ হই। অর্থাৎ পরিবহন ছাড়া আমাদের জীবনযাপন বিশেষ করে শহুরে জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব।
এই পরিবহনে চলে নানা ধরনের নৈরাজ্য। ভাড়া বেশি নেওয়া, সিটিং গাড়িতে দাঁড়িয়ে লোক নেওয়া, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক উঠানো, ট্রাফিক আইন না মানা, অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি নানা রকমের অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পুরানো। আর এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়াতে বিস্তর প্রতিবেদন, লেখালেখি, টকশোতে গরম গরম আলোচনা সমালোচনা, মানবন্ধন, মিছিল, সমাবেশ হরহামেশাই হয়। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমি অন্য লেখায় আলোচনা করেছি। কিন্তু আজ আমার আলোচনার বিষয় আমরা যারা পরিবহনের যাত্রী তাদের নিয়ে।
পরিবহনে তথা বাসে আমরা যখন যাতায়াত করি তখন বাসের স্টাফদের সাথে আমাদের দু-চার কথা বিনিময় করতে হয়। আর এই দু-চার কথা বিনিময় করতে গিয়েই আমরা যেন খেই হারিয়ে ফেলি। হঠাৎ করেই যেন আমাদের আচরণে উগ্রতা এসে ভর করে। চলুন মিলিয়ে দেখি আমাদের কার কার মধ্যে এই অভ্যাসগুলো রয়েছে।
আমরা অনেকেই লোকাল বাসে উঠে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলি ঐ ব্যাটা গাড়ি বাড়া। তগো হারা জীবনেও পেট ভরব না ব্যাটা, গাড়ি বারা। কেউ কেউ আবার কিছু খাস বাংলা ব্যবহার করেন...... পোলা গাড়ি বারা ইত্যাদি’। স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী বেশি উঠালে আমরা কেউ কেউ বলি কি রে ড্রাইভার তোর অয়নাই? আর কি তোর মাতায় লবি নাকি? শালারা তোরা জীবনেও মানুষ হবি না ইত্যাদি। গাড়ি যদি স্বাভাবিকের চাইতে একটু ধীর গতিতে চলে তবে আমরা কেউ কেউ বলি কিরে রিকসা চালাস নাকি? তোর পিছের গাড়ি আগে যায় কেমনে? ব্যাটা গাড়ি থুইয়া রিকসা চালাগা যা ’ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। আবার স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু বেশি গতিতে চললে আমরা কেউ কেউ বলি ঐ ব্যাটা গাড়ি কেমনে চালাছ, আস্তে চালা,গাঞ্জা খাইছস নাকি? কেউ কেউ বলি তোরতো জীবনের দাম নাই ব্যাটা আমগো জীবনের দাম আছে, আস্তে চালা ইত্যাদি। কন্ট্রাকটর যখন ভাড়া চাইতে এসে বলে ভাই ভাড়াডা দেনতো কিংবা মামা/স্যার ভাড়াডা লনতো। তখন আমরা দুএকজন বলি পরে ল। দ্বিতীয়বার চাইলে পরে কিছু ঐতিহ্যবাহী বাংলা গালি ঝেড়ে দিয়ে বলি ...কইছিনা পরে ল,থাপর মাইরা কানাপট্রি আওলাইয়া ফালামু ব্যাটা ইত্যাদি। ভাড়া দেওয়ার পরেও যদি ভুল করে কারও কাছে ভাড়া চাওয়া হয় তবে কন্ট্রাকটরের প্রতি তেড়ে গিয়ে বলি ব্যাটা ভাড়া যে নিয়া গেলি খবর নাই। এরই মধ্যে ভুইলা গেছস? যদিও এত মানুষের ভিড়ে এই বিষয়টা মনে রাখা কঠিন। এমনকি আমরা যারা রেগে গেলাম তারা এই দায়িত্বটা পালন করতে গেলেও এই ভুলটা আরও বেশি করতাম। আর অতিরিক্ত ভাড়া সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলেতো কথাই নেই। হই হই রই রই করে চড়াও হয়ে যাই অসহায় কন্ট্রাকটরের ওপর। চড়, থাপ্পর, কিল, ঘুষি মেরে ওকে শায়েস্তা করি বীরের মতো।
আরও আছে ভাংতির অভাবে আমরা ভদ্রলোকেরা যখন কম দেই তখন বলি আর ভাংতি নেই যা। কিংবা বলি এক টাকা কম আছেরে মামা ল। কিন্তু একই কারণে কন্ট্রাকটর যখন আপনাকে এক টাকা কম দিতে চাইছেন তখনই আমরা ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ি এভাবে-পুরা টেকা দে ব্যাটা। কম দেস কেন? কম নিমু না কিংবা ঐ ব্যাটা এক টাকা কম দেস কেন? তগো এক টাকা কম দিলে ত লইবার চাস না। কিন্তু এক টাকা কমের জন্য কোনো কন্ট্রাকটর কাউকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে কিংবা দূর্ব্যবহার করেছে এমনটি আমার জানা নেই। বরং কারো কাছে টাকা না থাকলেও তারা যাত্রীকে যথাস্থানে নামিয়ে দিয়েছে এমন অনেক দেখেছি।
বাসে উঠানামা নিয়েও এক ধরনের দ্বৈতনীতি আছে আমাদের মধ্যে। যেমন ধরুন একটি সিটিং গাড়ি যারা দুচারজন দাঁড় করিয়ে লোক নেই। (যদিও এটা অপরাধ) । তারা যখন গেট লাগিয়ে দেয় তখন বাইরে থেকে কিছু যাত্রী উঠার জন্য দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন এবং জানালা দিয়ে কন্ট্রাকটার/ হেলপারকে কিছুটা নরম স্বরে অনুরুধ করেন এভাবে‘ একটু নিয়া যাওনা ভাই, আরে অনেকখন ধইরা গাড়ি পাইনা, দুইএকজন লওনা ভাই। আবার ঘটনাক্রমে একই ব্যক্তি যখন পরের দিন গাড়ির ভিতর থাকেন তখন তিনিই লোক উঠানো নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে পরিবহন স্টাফদের গালিগালাজ করেন। আরও আছে। লোকাল গাড়িতে কিছু লোক উঠেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন তারপর বলেন-এই মিয়া গাড়ি ছাড়ো আর যায়গা নাই। বাইরে থাকা যাত্রী কিংবা কন্ট্রাকটর তাকে পিছনে চাঁপতে বললেও তিনি চাঁপেন না। কিন্তু তিনিই যখন পরের দিন বাইরে থাকেন তখন তিনি খুব কষ্টের সাথে বলেন -শালার প্যাসেঞ্জাররাও খারাপ কম না। পিছে গাড়িডা খালি পইরা রইছে তাও পিছে যায়না। ঐ লোকগুলা চাঁপলেই কিন্তু আরো কয়ডা যাত্রী উঠতে পারতো। এদিকে কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয় যে হাজার হাজার মানুষ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তুু কোনো কারণে গাড়ি নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে কেউ কেউ রিকশা, সিএনজি,ভ্যান কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ করে গন্তব্যে যান। পরিস্থিতি এমন যে বাড়তি টাকা লাগলেও যে কোনো উপায়ে বাসায় পোঁছানোটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে কোনো একটা গাড়ি এসে যদি ৫ টাকা করে ভাড়া বেশি চায় তখন আমরা কেউ তা দিতে চাই না। উল্টো বাসের স্টাফদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার করি। বেশি চাহিদার বিপরীতে যোগান কম থাকলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় এই আর্থিক বিষয়টি অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা মেনে নিলেও এখানে আমরা তা একেবারেই মানতে চাই না। আর এজন্য ওরাও অনেক সময় বাস খালি থাকলেও গেট বন্ধ রেখে বলে- যাব না।
এবার ভিন্নভাবে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি । আপনি কি কখনো ভাবতে পারেন আপনি একটি বাসে বসে আছেন আর সেই বাসের কন্ট্রাকটার আপনাকে এসে বলছে ঐ ব্যাটা ভাড়া ল। কি অইল কথা কান দিয়া হান্দায় না? ভাড়া ল ব্যাটা। নিশ্চয়ই এমন কথা আপনি শুনলে সাথে সাথেই তাকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দিবেন। আর এটাইতো স্বাভাবিক! আপনি আপনার গন্তব্যে যেতে তার গাড়ি ব্যবহার করছেন বিনিময়ে তাকে অর্থ দিচ্ছেন। আবার বাসের স্টাফ তার জীবিকা নির্বাহের জন্য আপনাকে একটি সার্ভিস দিয়ে টাকা নিচ্ছে। এখানে উভয়ের কাছেই উভয়ের প্রয়োজনটা বড়। তাহলে কেন শুধু একপক্ষ আরেক পক্ষের উপর এভাবে শারীরিক ও মানসিক জুলুম করবে? এখানে সুবিধা নিচ্ছেন দুইপক্ষ। কিন্তু গালিগালাজ সইছেন এক পক্ষ। কিন্তু কেন এই বিভাজন? তারা কি মানুষ নয় ? আজকাল আমরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত চোর, বদমায়েশ, চাঁদাবাজদের সালাম দিই। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে ন্যূনতম সম্মানটুকু করতে পারি না। কেন গাড়িতে উঠলেই আমরা এভাবে বদলে যাই? বাসের ঐ হেল্পার, কন্ট্রাকটরটিই যখন অন্য একটি বাসের যাত্রী হয়ে আপনার পাশে বসে তখন আপনি কি তাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলতেন। পরিবহন সেক্টরের মানুষগুলোকে একটু সম্মান দিয়ে একটু স্নেহ দিয়ে কথা বললে আমরা কি খুব ছোট হয়ে যাই? নিশ্চয়ই না। দেখুন বাসের কন্ট্রাকটার, হেল্পার, কিংবা ড্রাইভার যে পরিবেশে থাকে, যে সামাজিক আবহের মধ্যে তারা জীবনযাপন করেন, সারাদিন রোদে পুড়ে যে পরিশ্রম তারা করেন, তাদের পারিবারিক অবস্থান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির যে শূণ্যতা সেসব কিছু বিবেচনায় আমাদের মানবিকতা, আমাদের আচরণগুলো আর একটু ভদ্রোচিত ও সামাজিক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এতক্ষণ আমি যে বিষয়ের দিকে আলোকপাত করলাম তার মূল কথা এই যে আমরা সমাজের তুলনামূলক ভদ্র ও শিক্ষিত দাবিদার কতিপয় বাসের যাত্রীরা প্রায়ই যে অনুচিত,শ্রুতি ও দৃষ্টিকটু আচরণগুলো বাসের মধ্যে করে থাকি তা থেকে আসুন আমরা বিরত হই। শুধু এইটুকু ভাবতে শিখি। এসব হেলপার, কন্ট্রাকটর ও ড্রাইভাররা আমাদেরই ভাই, সন্তান। ওরা এ সমাজেরই মানুষ। ওরা আমাদের থেকে একটু ভালো আচরণ প্রত্যাশা করতেই পারে।
এই পরিবহনে চলে নানা ধরনের নৈরাজ্য। ভাড়া বেশি নেওয়া, সিটিং গাড়িতে দাঁড়িয়ে লোক নেওয়া, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক উঠানো, ট্রাফিক আইন না মানা, অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি নানা রকমের অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পুরানো। আর এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়াতে বিস্তর প্রতিবেদন, লেখালেখি, টকশোতে গরম গরম আলোচনা সমালোচনা, মানবন্ধন, মিছিল, সমাবেশ হরহামেশাই হয়। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমি অন্য লেখায় আলোচনা করেছি। কিন্তু আজ আমার আলোচনার বিষয় আমরা যারা পরিবহনের যাত্রী তাদের নিয়ে।
পরিবহনে তথা বাসে আমরা যখন যাতায়াত করি তখন বাসের স্টাফদের সাথে আমাদের দু-চার কথা বিনিময় করতে হয়। আর এই দু-চার কথা বিনিময় করতে গিয়েই আমরা যেন খেই হারিয়ে ফেলি। হঠাৎ করেই যেন আমাদের আচরণে উগ্রতা এসে ভর করে। চলুন মিলিয়ে দেখি আমাদের কার কার মধ্যে এই অভ্যাসগুলো রয়েছে।
আমরা অনেকেই লোকাল বাসে উঠে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলি ঐ ব্যাটা গাড়ি বাড়া। তগো হারা জীবনেও পেট ভরব না ব্যাটা, গাড়ি বারা। কেউ কেউ আবার কিছু খাস বাংলা ব্যবহার করেন...... পোলা গাড়ি বারা ইত্যাদি’। স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী বেশি উঠালে আমরা কেউ কেউ বলি কি রে ড্রাইভার তোর অয়নাই? আর কি তোর মাতায় লবি নাকি? শালারা তোরা জীবনেও মানুষ হবি না ইত্যাদি। গাড়ি যদি স্বাভাবিকের চাইতে একটু ধীর গতিতে চলে তবে আমরা কেউ কেউ বলি কিরে রিকসা চালাস নাকি? তোর পিছের গাড়ি আগে যায় কেমনে? ব্যাটা গাড়ি থুইয়া রিকসা চালাগা যা ’ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। আবার স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু বেশি গতিতে চললে আমরা কেউ কেউ বলি ঐ ব্যাটা গাড়ি কেমনে চালাছ, আস্তে চালা,গাঞ্জা খাইছস নাকি? কেউ কেউ বলি তোরতো জীবনের দাম নাই ব্যাটা আমগো জীবনের দাম আছে, আস্তে চালা ইত্যাদি। কন্ট্রাকটর যখন ভাড়া চাইতে এসে বলে ভাই ভাড়াডা দেনতো কিংবা মামা/স্যার ভাড়াডা লনতো। তখন আমরা দুএকজন বলি পরে ল। দ্বিতীয়বার চাইলে পরে কিছু ঐতিহ্যবাহী বাংলা গালি ঝেড়ে দিয়ে বলি ...কইছিনা পরে ল,থাপর মাইরা কানাপট্রি আওলাইয়া ফালামু ব্যাটা ইত্যাদি। ভাড়া দেওয়ার পরেও যদি ভুল করে কারও কাছে ভাড়া চাওয়া হয় তবে কন্ট্রাকটরের প্রতি তেড়ে গিয়ে বলি ব্যাটা ভাড়া যে নিয়া গেলি খবর নাই। এরই মধ্যে ভুইলা গেছস? যদিও এত মানুষের ভিড়ে এই বিষয়টা মনে রাখা কঠিন। এমনকি আমরা যারা রেগে গেলাম তারা এই দায়িত্বটা পালন করতে গেলেও এই ভুলটা আরও বেশি করতাম। আর অতিরিক্ত ভাড়া সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলেতো কথাই নেই। হই হই রই রই করে চড়াও হয়ে যাই অসহায় কন্ট্রাকটরের ওপর। চড়, থাপ্পর, কিল, ঘুষি মেরে ওকে শায়েস্তা করি বীরের মতো।
আরও আছে ভাংতির অভাবে আমরা ভদ্রলোকেরা যখন কম দেই তখন বলি আর ভাংতি নেই যা। কিংবা বলি এক টাকা কম আছেরে মামা ল। কিন্তু একই কারণে কন্ট্রাকটর যখন আপনাকে এক টাকা কম দিতে চাইছেন তখনই আমরা ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ি এভাবে-পুরা টেকা দে ব্যাটা। কম দেস কেন? কম নিমু না কিংবা ঐ ব্যাটা এক টাকা কম দেস কেন? তগো এক টাকা কম দিলে ত লইবার চাস না। কিন্তু এক টাকা কমের জন্য কোনো কন্ট্রাকটর কাউকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে কিংবা দূর্ব্যবহার করেছে এমনটি আমার জানা নেই। বরং কারো কাছে টাকা না থাকলেও তারা যাত্রীকে যথাস্থানে নামিয়ে দিয়েছে এমন অনেক দেখেছি।
বাসে উঠানামা নিয়েও এক ধরনের দ্বৈতনীতি আছে আমাদের মধ্যে। যেমন ধরুন একটি সিটিং গাড়ি যারা দুচারজন দাঁড় করিয়ে লোক নেই। (যদিও এটা অপরাধ) । তারা যখন গেট লাগিয়ে দেয় তখন বাইরে থেকে কিছু যাত্রী উঠার জন্য দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন এবং জানালা দিয়ে কন্ট্রাকটার/ হেলপারকে কিছুটা নরম স্বরে অনুরুধ করেন এভাবে‘ একটু নিয়া যাওনা ভাই, আরে অনেকখন ধইরা গাড়ি পাইনা, দুইএকজন লওনা ভাই। আবার ঘটনাক্রমে একই ব্যক্তি যখন পরের দিন গাড়ির ভিতর থাকেন তখন তিনিই লোক উঠানো নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে পরিবহন স্টাফদের গালিগালাজ করেন। আরও আছে। লোকাল গাড়িতে কিছু লোক উঠেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন তারপর বলেন-এই মিয়া গাড়ি ছাড়ো আর যায়গা নাই। বাইরে থাকা যাত্রী কিংবা কন্ট্রাকটর তাকে পিছনে চাঁপতে বললেও তিনি চাঁপেন না। কিন্তু তিনিই যখন পরের দিন বাইরে থাকেন তখন তিনি খুব কষ্টের সাথে বলেন -শালার প্যাসেঞ্জাররাও খারাপ কম না। পিছে গাড়িডা খালি পইরা রইছে তাও পিছে যায়না। ঐ লোকগুলা চাঁপলেই কিন্তু আরো কয়ডা যাত্রী উঠতে পারতো। এদিকে কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয় যে হাজার হাজার মানুষ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তুু কোনো কারণে গাড়ি নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে কেউ কেউ রিকশা, সিএনজি,ভ্যান কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ করে গন্তব্যে যান। পরিস্থিতি এমন যে বাড়তি টাকা লাগলেও যে কোনো উপায়ে বাসায় পোঁছানোটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে কোনো একটা গাড়ি এসে যদি ৫ টাকা করে ভাড়া বেশি চায় তখন আমরা কেউ তা দিতে চাই না। উল্টো বাসের স্টাফদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার করি। বেশি চাহিদার বিপরীতে যোগান কম থাকলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় এই আর্থিক বিষয়টি অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা মেনে নিলেও এখানে আমরা তা একেবারেই মানতে চাই না। আর এজন্য ওরাও অনেক সময় বাস খালি থাকলেও গেট বন্ধ রেখে বলে- যাব না।
এবার ভিন্নভাবে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি । আপনি কি কখনো ভাবতে পারেন আপনি একটি বাসে বসে আছেন আর সেই বাসের কন্ট্রাকটার আপনাকে এসে বলছে ঐ ব্যাটা ভাড়া ল। কি অইল কথা কান দিয়া হান্দায় না? ভাড়া ল ব্যাটা। নিশ্চয়ই এমন কথা আপনি শুনলে সাথে সাথেই তাকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দিবেন। আর এটাইতো স্বাভাবিক! আপনি আপনার গন্তব্যে যেতে তার গাড়ি ব্যবহার করছেন বিনিময়ে তাকে অর্থ দিচ্ছেন। আবার বাসের স্টাফ তার জীবিকা নির্বাহের জন্য আপনাকে একটি সার্ভিস দিয়ে টাকা নিচ্ছে। এখানে উভয়ের কাছেই উভয়ের প্রয়োজনটা বড়। তাহলে কেন শুধু একপক্ষ আরেক পক্ষের উপর এভাবে শারীরিক ও মানসিক জুলুম করবে? এখানে সুবিধা নিচ্ছেন দুইপক্ষ। কিন্তু গালিগালাজ সইছেন এক পক্ষ। কিন্তু কেন এই বিভাজন? তারা কি মানুষ নয় ? আজকাল আমরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত চোর, বদমায়েশ, চাঁদাবাজদের সালাম দিই। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে ন্যূনতম সম্মানটুকু করতে পারি না। কেন গাড়িতে উঠলেই আমরা এভাবে বদলে যাই? বাসের ঐ হেল্পার, কন্ট্রাকটরটিই যখন অন্য একটি বাসের যাত্রী হয়ে আপনার পাশে বসে তখন আপনি কি তাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলতেন। পরিবহন সেক্টরের মানুষগুলোকে একটু সম্মান দিয়ে একটু স্নেহ দিয়ে কথা বললে আমরা কি খুব ছোট হয়ে যাই? নিশ্চয়ই না। দেখুন বাসের কন্ট্রাকটার, হেল্পার, কিংবা ড্রাইভার যে পরিবেশে থাকে, যে সামাজিক আবহের মধ্যে তারা জীবনযাপন করেন, সারাদিন রোদে পুড়ে যে পরিশ্রম তারা করেন, তাদের পারিবারিক অবস্থান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির যে শূণ্যতা সেসব কিছু বিবেচনায় আমাদের মানবিকতা, আমাদের আচরণগুলো আর একটু ভদ্রোচিত ও সামাজিক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এতক্ষণ আমি যে বিষয়ের দিকে আলোকপাত করলাম তার মূল কথা এই যে আমরা সমাজের তুলনামূলক ভদ্র ও শিক্ষিত দাবিদার কতিপয় বাসের যাত্রীরা প্রায়ই যে অনুচিত,শ্রুতি ও দৃষ্টিকটু আচরণগুলো বাসের মধ্যে করে থাকি তা থেকে আসুন আমরা বিরত হই। শুধু এইটুকু ভাবতে শিখি। এসব হেলপার, কন্ট্রাকটর ও ড্রাইভাররা আমাদেরই ভাই, সন্তান। ওরা এ সমাজেরই মানুষ। ওরা আমাদের থেকে একটু ভালো আচরণ প্রত্যাশা করতেই পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন